1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৭ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

সচিবালয়ে আগুনের প্রাথমিক প্রতিবেদন: তদন্তে যা উঠে এলো

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৭৮ বার পঠিত

ডেস্ক রিপোর্ট : ঢাকা: বাংলাদেশ সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে আগুনের ঘটনায় গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেয়।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার গেটে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণি জানান, লুজ কানেকশনে বৈদ্যুতিক স্পার্ক থেকে সচিবালয়ে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। ভয়াবহ এ আগুনে নাশকতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি।

তবে প্রাথমিক তদন্তে উদঘাটিত বৈদ্যুতিক গোলযোগের (স্পার্ক) বিষয়টির সঙ্গে অন্য কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে বলে কমিটির পরবর্তী কার্যক্রম অংশে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত ২৬ ডিসেম্বর দিনগত মধ্য রাতে সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে আগুন লাগে। আগুনে ছয় থেকে নয় তলার প্রায় সবকিছুই পুড়ে যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাঁচ মন্ত্রণালয়। এ ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার। তদন্ত কমিটি বুয়েট, সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে রিপোর্ট তৈরি করে।

বুয়েট বিশেষজ্ঞ দলের পর্যবেক্ষণ

আগুনের উৎপত্তিস্থল ৭ নম্বর ভবনের ৬ তলার লিফট লবি সংলগ্ন করিডোর থেকে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়, পরবর্তী সময়ে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণে যার সত্যতা পাওয়া যায়। আগুনের সূত্রপাত ২৬ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ১টা ৩০ থেকে ১টা ৪০ মিনিটের মধ্যে। প্রথম যখন আগুন শনাক্ত করা হয়, ফায়ার ফাইটারদের সাক্ষ্য ও উত্তর দিক থেকে নেওয়া ভিডিও অ্যানালাইসিস করে দেখা যায়, আনুমানিক রাত ২টার সময় আগুন ডেভেলপ স্টেজে (বিকশিত স্তর) চলে যায়।

সিসিটিভি ফুটেজে দৃশ্যমান বৈদ্যুতিক স্পার্ক থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। সাধারণত সকেট-প্লাগে লুজ কানেকশন, ক্যাবলে ফল্টি জয়েন্ট, কনট্যাস্ট সারফেসে অক্সিডেশন ইত্যাদি কারণে বৈদ্যুতিক স্পার্ক হয়ে থাকে। উক্ত স্পার্ক সংলগ্ন এলাকায় ধোঁয়া ও আগুনের উৎপত্তি হয়, যা ক্রমশ ফ্ল্যাশওভারে পরিণত হয়। এটি একটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, এ ধরনের অগ্নিনির্বাপণে ব্যবহৃত পানির প্রবাহে ভস্মীভূত ধ্বংসাবশেষের অধিকাংশ আলামত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ভবনে কোনো ধরনের ফায়ার ডিটেকশন সিস্টেম না থাকায় প্রাথমিক ও বিকশিত অবস্থায় আগুন শনাক্ত করা যায়নি।

টানেল সদৃশ্য করিডোরের ফলস সিলিং দাহ্য ও অতি দাহ্য পদার্থ দিয়ে আচ্ছাদিত থাকায় আগুন অতিদ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ভবনের লিফট ও সিঁড়ির অপরিকল্পিত নকশার কারণে চিমনি ইফেক্ট সৃষ্টি হয়, যাতে অগ্নি শিখা দ্রুত ঊর্ধ্বমুখী প্রপাগেশন করে ৬ তলা থেকে ৭, ৮ ও ৯ তলায় ছড়িয়ে যায়, যা ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়।

করিডোরে আগুন প্রবাহকালে পাশের রুমগুলোর দরজা পুড়ে যায়। রুমের ভেতরে দাহ্যবস্তু (কাগজ, কাপড়, ফোম, কার্পেট, ফার্নিচার ইত্যাদি) রক্ষিত থাকার কারণে রুমে আগুন প্রবেশ করে। বিভিন্ন রুমে ফুয়েলের পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন হবার কারণে বিভিন্ন রুম বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৬ তলার ৫২৪ নম্বর এবং ৮ তলার ৭০৪ নম্বর কক্ষ দুটির এয়ারকন্ডিশন থেকে রেফ্রিজারেন্ট নির্গত হয়ে প্রজ্বলনের কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে প্রতীয়মান হয়।

সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দলের পর্যবেক্ষণ

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দল কর্তৃক কোনো ধরনের বিস্ফোরক ব্যবহার করে নাশকতামূলকভাবে আগুনের সূত্রপাত ও বিস্তার করা হয়েছে কিনা তার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে।

আগুনের ক্ষয়ক্ষতি ও মাত্রা বিবেচনায় বিশেষজ্ঞ দল প্রাথমিকভাবে অগ্নিকাণ্ডের তিনটি সম্ভাব্য উৎপত্তিস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করে সেনাবাহিনীর কাউন্টার আইইডি ফিউশন সেন্টারের পরীক্ষাগারে প্রাথমিকভাবে শনাক্তকরণ পরীক্ষা করা হয়।

শনাক্তকরণের কাজে তিনটি আধুনিক বিস্ফোরক ডিটেকশন ডিভাইস- প্রোর্টেবল এক্সপ্লোসিভ ট্রেস ডিটেক্টর (ইউকে), আইটেমাইজার এক্সপ্লোসিভট্রেস ডিটেক্টর (জার্মানি) ও ম্যাস স্পেকট্রোমিটার (ইউএসএ) ব্যবহার করা হয়েছে।

মাল্টি-চ্যানেল ফ্লোরিস্কেন টেকনোলজি, আয়ন মবিলিটি স্পেকট্রোমিটার (আইএমএস), আয়ন ট্রাপ ম্যাস স্পেকট্রোমিটারি পদ্ধতি ব্যবহার করে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। চারটি নমুনা পরীক্ষা করে কোনো বিস্ফোরকের উপস্থিতি শনাক্ত করা যায়নি।

সংগ্রহকৃত একটি নমুনা বুয়েটের ল্যাবে পরীক্ষা করে কোনো রকম ক্ষতিকারক উপাদান পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ডগ স্কোয়াড মোতায়েন করে কোনো ধরনের বিস্ফোরকের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।

সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অগ্নিকাণ্ডের উৎপত্তিস্থল নিশ্চিতকরণে অধিকতর পরীক্ষার জন্য ৩০ ডিসেম্বর পুনরায় নমুনা সংগ্রহ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাউন্টার আইইডি ফিউশন সেন্টারের পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ

ফায়ার সার্ভিসের প্রথমে তিনটি দল ৭ নম্বর ভবনের পশ্চিম অংশের ষষ্ঠ তলার সিঁড়িতে ১টা ৫২ মিনিটে, মধ্যে খানের সিঁড়িতে ১টা ৫৮ মিনিটে এবং পূর্বাংশের সিঁড়িতে ২টা ৭ মিনিটে ফায়ার ফাইটিং শুরু করে। ফায়ার ফাইটারদের ভাষ্যমতে উক্ত সময়ে আগুন ষষ্ঠ তলার করিডোরের মধ্যে সম্পূর্ণ বিকশিত পর্যায়ে ছিল।

অগ্নিনির্বাপণ ও রেসকিউ অপারেশন পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত জায়গার অভাব ও স্পেশাল গাড়ি (উঁচু মই সংযুক্ত ফায়ার গাড়ি) প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা থাকায় গতানুগতিক ফায়ার ফাইটিং করা হয়েছিল। পরবর্তীতে শুধুমাত্র দুটি স্পেশাল গাড়ি (উঁচু মই সংযুক্ত গাড়ি) ৭ নম্বর ভবনের দক্ষিণ দিকে ব্যবহার করা সম্ভব হয়।

প্রতিটি ফ্লোরের করিডোরে চারটি কলাপসিবল গেট তালা দিয়ে আটকানো ছিল এবং সেখানে প্রচণ্ড ধোঁয়া ও তাপ সৃষ্টির ফলে তালা কেটে ভেতরে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ হয়েছে।

প্রতিটি ফ্লোরে ইন্টেরিয়র ডিজাইন অতীব মাত্রায় পরিলক্ষিত হয়, যা উচ্চ মাত্রার দাহ্যবস্তু এবং আগুন বিস্তারে অত্যন্ত সংবেদনশীল। প্রতি তলায় অধিকাংশ রুমে উচ্চ ও সহজ দাহ্যবস্তু দ্বারা কক্ষগুলো বিভাজন করা ছিল। প্রত্যেকটা ফলস সিলিং-এর ওপরে বিভিন্ন ধরনের বিপুল পরিমাণ বৈদ্যুতিক তারসহ অন্যান্য তার বিদ্যমান ছিল। কোনো কোনো রুমের পরিমাপ অনুপাতে অপেক্ষাকৃত বেশি ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন, কাগজপত্র ও আসবাবপত্র বিদ্যমান ছিল।

৭ নম্বর ভবনটিতে অ্যালার্ম অ্যান্ড ডিটেক্টর সিস্টেম, কন্ট্রোল প্যানেল, অটো স্প্রিংকলার ইত্যাদি অগ্নি নিরাপত্তার সিস্টেম ছিল না এবং কোনো কোনো ফ্লোরে হোজপাইপ সিস্টেম থাকলেও তা ছিল অকার্যকর এবং নজেলবিহীন। ফলে ম্যানুয়ালি লাইন খুলে প্রতিটি ফ্লোরে ফায়ার সার্ভিসের হোজপাইপ লে-আউট করে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ছিল সময়সাপেক্ষ।

সচিবালয়ের অভ্যন্তরে তিনটি আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভারের মজুদ পানি পর্যাপ্ত না হওয়ায় দূরবর্তী স্থান- ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন ও গেটের বাইরে বিশেষ পানিবাহী গাড়ি থেকে অনেক হোজপাইপ লে-আউটের মাধ্যমে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হয়েছে। এছাড়া ওয়াসা থেকেও পানি সরবরাহ করা হয়েছে।

৭ নম্বর ভবনের ৬, ৭, ৮ ও ৯ তলায় দ্রুত গতিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রথমে ষষ্ঠ তলায় আগুন নির্বাপণ করতে হয়েছে, পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে সপ্তম, অষ্টম ও নবম তলায় আগুন নির্বাপণে সময়ের প্রয়োজন হয়েছে।

২৬ ডিসেম্বর সকাল ৮টা ৫ মিনিটে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে এবং ১১টা ৪৫ মিনিটে নির্বাপণ সম্পন্ন হয়।

তদন্ত কমিটির পরবর্তী কার্যক্রম

আগুনের উৎপত্তিস্থল থেকে ৩০ ডিসেম্বর যে সব নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে তা সেনাবাহিনীর কাউন্টার আইইডি ফিউশন সেন্টারের পরীক্ষাগারে বিভিন্ন বিস্ফোরক ডিটেকশন ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হবে। এ কার্যক্রম পরিচালনা করবে সেনাবাহিনী।

ঘটনা পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ৭ নম্বর ভবন এবং আশপাশের ভবনের সব সিসিটিভির ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ কার্যক্রম চালাচ্ছে পুলিশ।

আগুনটি বৈদ্যুতিক উৎস থেকে শুরু হয়েছিল কিনা তা অধিকতর রূপে নিশ্চিত হওয়ার জন্য দগ্ধ বৈদ্যুতিক ক্যাবল সেগমেন্ট, জয়েন্ট বক্স এবং ব্রেকারগুলোর নমুনার ওপর বিভিন্ন পরীক্ষা করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে: এক্স-রে রেডিওগ্রাফ, মাইক্রোস্কোপিক পরীক্ষা এবং পোড়া ইনসুলেটরের রাসায়নিক গঠনের জন্য ফুরিয়ার ট্রান্সফর্ম ইনফ্রারেড স্পেকট্রোস্কোপি করেও আগুনের কারণ সম্পর্কে সূত্র পাওয়া যেতে পারে। এ কার্যক্রম পরিচালনা করবে বুয়েট পরামর্শক দল।

প্রাথমিক তদন্তে উদঘাটিত বৈদ্যুতিক গোলযোগের (স্পার্ক) বিষয়টির সঙ্গে অন্যকোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..